যশোর ব্যুরো : রাত পোহালেই যশোর জেলা পরিষদের নির্বাচন। প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে ইভিএমে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হলেও বসে নেই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তারা ভোটারদের বাড়ি-অফিসে গিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালাচ্ছেন। দিচ্ছেন ভোটের মাঠের আসা-যাওয়াসহ আপ্যায়ন খরচ। তবে অনেক প্রার্থী গত দুইদিন ধরেই টাকার থলে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। যে কোন মূল্যে জয়ী হতে অনেকে ভোটারদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অর্থ লেনদেন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে কেউ অভিযোগ করেনি।
নির্বাচন অফিস মতে, যশোর জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ডসহ মোট ১২টি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে দুইজনসহ মোট ৫১ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। জেলার ৮টি কেন্দ্রে ১৬টি ভোট কেন্দ্রে এক হাজার ৩১৯ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এজন্য আটজন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৩২ জন পোলিং অফিসার, ৫৬ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। যশোর সদর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে যশোর কালেক্টরেট স্কুলে। এদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান পিকুলের ঘোড়া প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হোসেন কাজল। দুইজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বররা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ঘরোনার হওয়ায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কাজলের জন্য চ্যালেঞ্জের বলে অনেকে মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক আমিরুল ইসলাম রন্টুর মতে, ভোটারদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ঘরোণার। তাই বিজয়ী হতে পিকুলকে বেগ পেতে হবে না। তবে সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী সদস্যের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা উন্মুক্ত রাখায় ভোটযুদ্ধ হবে ওই পদগুলোতে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, প্রতিটি ভোটারে দুয়ারে দুয়ারে যাওয়া হয়েছে। আল্লাহ চাইলে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়ী হবো।
বিকল্পধারার নেতা আনারস প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হাসান কাজল বলেন, আল্লাহ রহমতে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি; ভালো ফলাফল করবো।
এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সালেহ আহমেদ মিন্টু ও সহিদুল আলম। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু দলের নেতা সালেহ আহমেদ মিন্টুকে প্রার্থী করেছেন। সেই অনুযায়ী আফিল-মঞ্জুর সমর্থকরা বহর নিয়ে মিন্টুকে বিজয়ী করতে মাঠে নামেছেন। আরেকজন সদস্য পদে প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সহিদুল আলম। তার সাথে এমপি আফিল বিরোধীরা মাঠে রয়েছেন। তারা সহিদুল আলমের পক্ষে মাঠে নামেন। এখানকার ভোটের মাঠে কিছুটা উত্তাপ রয়েছে।
দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন ইমামুল হাবিব, রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, ইকবাল আহমেদ ও সুরত আলী। এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারণা। তবে এখানে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন এক প্রার্থী। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
তিন নম্বর ওয়ার্ড চৌগাছা থেকে প্রার্থী হয়েছেন দেওয়ান তৌহিদুর রহমান, কামরুজ্জামান, আসাদুল ইসলাম ও আহসান হাবীব। চার নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন প্রদীপ দে, আব্দুর রউফ মোল্লা, জিএম মনিরুজ্জামান, শেখ মাহবুব উর রহমান, ফারাজী আশিকুল ইসলাম বাঁধন ও এমএম আজিম উদ্দিন। তারা সবাই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ইউনুছ আলী, এনায়েত হোসেন লিটন ও রাকিব হাসান ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। আর ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন শ্রমিকলীগ নেতা জবেদ আলী, শেখ ইমামুল কবির, রাকিবুল আলম রাকিব, সোহেল রানা, শেখ আব্দুল মতলেব ও ওহায়েদুজ্জামান সেলিম। এই ওয়ার্ডে প্রার্থীদের সাথে রয়েছে বড় বড় নেতাদের আশীর্বাদ। ফলে জয়ী হতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। অভিযোগ রয়েছে এ ওয়ার্ডে টাকার খেলা চলছে। এ নিয়ে শহরে নানান গুঞ্জনও রয়েছে।
অন্যদিকে সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও শহিদুল ইসলাম মিলন ছুটছেন প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে। এরমধ্যে গৌতম চক্রবর্তী প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ভাগ্নে। অন্যজন মিলন গেলবার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এ নির্বাচনকে উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এ ওয়ার্ডে ভোটের মাঠে উত্তাপ রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকবেন বলে আভাস মিলেছে।
জেলা পরিষদের ভোটার ঝাঁপা ইউনিয়নের জামাল হোসেন বলেন, সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচনে জয়ী করতে হবে। সবাই একমত হয়েছি, যে সব প্রার্থীর নির্বাচনের পরে খোঁজে পাওয়া যায় না; তাদেরকে আমরা ভোট দিবো না। একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ভোটার মাহাবুর রহমান বলেন, সুখে-দুঃখে যে সব মানুষগুলোকে পাশে পাই; শুধু তারাই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার রাখেন। আমি সেই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো।
এদিকে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী আট নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে সোহরাব হোসেন, এসএম মহব্বত হোসেন, সাঈদুর রহমান, মাসুদুজ্জামান, আজিজুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন বিশ্বাস ও নজরুল ইসলাম খান নির্বাচন করছেন। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭ অক্টোবর ভোটের দিন পর্যন্ত।
অপরদিকে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ১ নম্বর থেকে রেহেনা খাতুন, হাজেরা পারভীন, রাখী ব্যানার্জী, লায়লা খাতুন, নাছিমা সুলতানা মহুয়া, সান-ই-শাকিলা আফরোজ, মরিয়াম বেগম ও বিলকিস সুলতানা সাথীসহ মোট আটজন ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। আর সংরক্ষিত দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাসরিন সুলতানা, রুকসান ইয়াসমীন পান্না ও নাদিরা বেগম এবং সংরক্ষিত তিন নম্বর ওয়ার্ডে সাহানা আক্তার, নাসিম আরা চৌধুরী ও শ্যায়লা জেসমিন নির্বাচন করছেন। তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এই বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আজ সব কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম চলে যাবে। ভোট কেনার বিষয়ে তার দফতরে কেউ কোন অভিযোগ দেননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com