রাঙ্গাবালীতে স্থায়ীভাবে মেরামত না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে অরক্ষিত রয়েছে উপজেলার চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়ার বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, আম্পান ও মহাসেনসহ নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে। সিগন্যাল হলে আতঙ্কে থাকেন ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় হলেই পানি উন্নায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এ অরক্ষিত বাঁধগুলো মেরামতের কথাও বলেন। কিছু কিছু বাঁধ মেরামতও হয়। কিন্তু স্থায়ীভাবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মেরামত হয় না বলে অভিযোগ উপকূলীয় এলাকার মানুষের।
চালিতাবুনিয়া বাসীদের অভিযোগ, সঠিকভাবে বেড়িবাঁধ মেরামত হয় না। একটু কাজ হলে আবার বন্ধ থাকে। এতে আমাদের কোনো লাভ হয় না। সরকারি টাকা কেবল জলেই চলে যায়। স্থানীয়দের কোনো উপকারে আসে না। সে কারণে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তারা আরো জানান, চালিতাবুনিয়া ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ করার কথা। কিন্তু তারা কিছু কাজ করে বাকি কাজ শেষ না করেই চলে গেছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, রাঙ্গাবালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ১৮৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। রাঙ্গাবালী উপজেলায় সাতটি পোল্ডারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধের জরুরি মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে পোল্ডার নং ৪৯, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের রিপিয়ারিং কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া চালতাবুনিয়া, লতারচর এলাকার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বউবাজার এলাকায় ভাঙন বেশি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ২৭০ মিটার বেড়িবাঁধ রিপিয়ারিং করা হয়েছে। এছাড়াও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিত এলাকায় আরো এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছি।
জলবায়ু বিরূপ প্রতিক্রয়া, লবণক্ততা, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আয়লা, মহাসেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় মানুষ।
অনুুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ আগে সামুদ্রিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বেড়িবাঁধ ও উন্নতমানের রেগুলেটর স্লুইসগেটের কাজ শেষ করে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ও রেগুলেটর স্লুইসগেটগুলো অকার্যকর ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় ১০ হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কৃষিকাজে পানি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় দিন-রাত পার করছেন। সরকার ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে অর্থ বরাদ্দ দিলে উপকূলীয় জনসাধারণের জীবন ও কৃষিসম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, এ বছর আমাদের হাতে কোনো বরাদ্দ নেই। আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নকে গুরুত্বপূর্র্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ কলসালটেন্ড এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করছেন। আশা করছি শিগগিরই প্রজেক্ট অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে অকার্যকর রেগুলেটর স্লুইসগেট এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো পুনর্নির্মাণ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com