গরু কেনার টাকা নেই। সংসার চালাতে প্রায় ২৪ বছর ধরে খাঁটি সরিষার তেল তৈরিতে ৬ মণ ওজনের কাঠের ঘানি টানছেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার আবুল কালাম আজাদ (৫৫) ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন (৪৫)।
১০ কেজি সরিষা থেকে ৩ কেজি তেল বের করতে ঘানির জোয়ালে এই দম্পতির হাঁটতে হয় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার। এভাবেই প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে দুই যুগ ধরে ঘানি টানছেন তারা। একদিন ঘানি না ঘোরালে চলে না সংসারের চাকা।
বৃহস্পতিবার সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের শ্রী দাসগাঁতী গ্রামের হতদরিদ্র আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গরুর বদলে ৬ মণ ওজনের ঘানি টানছেন এই দম্পতি। সরিষা থেকে তেল বের করতে দম্পতিকে ঘানি টানতে হয় একটানা আট ঘণ্টা। সেই তেল ও খৈল বিক্রি করে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই চলছে তাদের সংসারের চাকা।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের এ পরিশ্রমে নজর পড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের। তাদের কপালে আজও জোটেনি সরকারি কোনো সাহায্য। ভাঙা ঘরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। দুই সন্তান বড় হয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। বাবা মায়ের ঘানি ভাঙানো আয়ে তারা বড় হলেও এখন তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই দম্পতি ঘানির বোঝা টেনে চলেছে নীরবে। কবে তারা এই বোঝা থেকে মুক্ত হবে তা জানা নেই তাদের।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন ঠিক মতো ঘানি টানতে পারি না। এই ঘানি টেনেই ৬ সন্তানকে মানুষ করেছি। প্রতিদিন ফজর আজান থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত আমি ও আমার স্ত্রী দুই দফায় ১০ কেজি সরিষা ঘানিতে ভাঙাই। এ থেকে ৩ কেজি তেল বের হয়। সেই তেল বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করি। এ থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে এখন ৩ ছেলে ও স্বামী-স্ত্রীর খাবার জোটে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন পার করছি।
কালামের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকে ঘানি টেনে যাচ্ছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো ভারী ঘানি টানতে পারি না। মাথা ঘোরে, পা চলে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তবুও পেটের তাগিদে ঘানি টানতে হয়।
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ঘানি টানছেন। পরিষদ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, ঘানি টানার বিষয়টি অবগত হয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। শিগগিরই তাদের সহযোগিতা করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা তাদের শিগগিরই সহযোগিতা করবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com