গোলা বারুদে ঝলসানো নিস্তব্ধ প্রকৃতির কঙ্কালের উপর সেদিন ছিলো কাক শকুনের ছোঁ,
ডোবা,ঝোপ হতে লাশ পঁচা গন্ধে ভয়ানক আতঙ্কে দুর্বিসহ কলোনিবাসী বদ্ধ ঘরের আবছা অন্ধকারে, মোটামুটি একজোট হয়েই পায়চারি রতো বদরের নিকট তার দুরন্তপনা মেয়ের নালিশ দিতে এক প্রকার মুখিয়েই ছিলো।
এক প্রতিবেশি ভাবী বলেই ফেললো; কশ্যিনকালেও ঐ মেয়া দমবার লয়, শিগগির ওক কন্ থুবা থুই আইসো ...!
মধ্য বয়সী এক চাচী কাঁপা কন্ঠে বললো; হেতি যেইয়্যালে ওগো তাম্বুতে আগুন ধরাইছে, যুদিকালে ধরা খাইতে,তো কি উপায় আছেলে?
গামছায় অর্ধেক মুখ ঢাকা মজু মোড়ল বললো, হুনো মীরার বাপ; নান্টুর বাইত্তে মিলিটারিরা একপাত খাইবো শুইন্যাই ,জনুর ফরমাশ খাটা পোলা চুন্নুরে দিয়া খাওনের পানির ঠিলায় নিদ্রাবুটি মিশায়া হেগোরে খিলাইয়া,বেহুঁশ কইরা, হেরপর বস্তায় ভইরা হেগোরে পানা পুষ্কুনিত ফালাইয়া তাইনেগো বন্দুকগুলান ঘরে লইয়া আইচে মাতারী। আর নান্টুরেতো মুখে গামছা ভইরা খামের লগে বাইন্দা রাখছে, কি ডাকাইত মাইয়া ভাবা যায়?
লম্বা ঘোমটা টেনে মোড়লের গিন্নি বললো,এইতা কইরা নিটাল তাকলেতো অইলো অইলে, তাইনে এলাকার হগ্গল ডেহি বেডিগরে ফুসলায়া বাহিনী বানাইয়া, কিওর জানি অপারেশনে নামছে। লগে আমার বেডিডারেও ফড়াই লাইছে, কইন, ইতান কি সহ্য করাম?
কথা শেষ না হতেই আচমকা ভেসে এলো শিউরে ওঠা করুন চিৎকার !
খিড়কীর ফুটো দিয়ে বাইরে লক্ষ্য করতেই কেউ কেউ ভয়ংকর দৃশ্যে অজ্ঞান । ঘরের কোণে বসা সালিসের আসামী মীরা ও তার ক্ষুদে বাহিনী সমেত তৎক্ষণাৎ সবটা উপেক্ষা করে খিরকির ছিদ্রতে দৃষ্টি দিতেই দেখলো সারিবদ্ধ মিলিটারিরা সামনেই তিন রাস্তার মোড়ে দুজন যুবককে লুঙ্গি উঁচিয়ে মুসলমান কিনা দেখে নির্মমভাবে করছে মারধর। পাশে কয়েকজন মিলিটারি একজন যুবতীকে বিবস্ত্র করে ঐ কাপড় দ্বারা তারই বাবাকে গাছে পেঁচিয়ে রাইফেলের আঘাতে জর্জরিত করে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলছে মুক্তি বাহিনী কাঁহা হ্যেয়। কুয়োর পাশে আরো বেশ কিছু ইংরেজ এক মুক্তিযোদ্ধা যুবককে ধরে এনে তার অর্ধেক শরীর মাটিতে পুতে করছে অমানুষিক নির্যাতন। থমথমে লোমহর্ষক দৃশ্যে আচমকা গুলির বিকট শব্দে খিরকীর দিয়ে ফের তাকাতেই সাহসী মীরা দেখলো গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত স্বামী ভরা মাসের গর্ভবতী স্ত্রী খুশীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যর্থ। দুজন হায়েনা বিকট অট্টহাসিতে খুশীকে টেনে হেচরে ওর ভরাগর্ভে মেরে চলেছে লাথির পর লাথি।
লোমহর্ষক দৃশ্যে মীরা আর সংযত থাকতে পারলো না। অগ্নিচোখে উঠে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক নালিশ দারের মুখে দিকে তাকিয়ে তড়িৎ গতিতে জমানো বন্ধুক তাক করে পিছন সিঁড়ি ঘেষে দলবল নিয়ে প্রবলবেগে বর্বরদের ঘায়েল করে গর্ভবতী খুশীর কাছে গিয়ে দেখে, ওর গর্ভের রক্তাক্ত নিষ্পাপ ভ্রুণটি লেপ্টে আছে সবুজ ঘাষে ! পাশেই সারিবদ্ধ নিরপরাধের দল। কলোনীর সবাই ততক্ষণে বেড়িয়ে দেখে, তেজস্বী গেরিলা মিরা বর্বরদের লাশ গুলো পাশের কুয়োয় নিক্ষেপ করে বঙ্গবন্ধুর অমর কবিতার একটি অসাধারণ প্রেরণার দুঃসাহসিক বাক্য তর্জনী উঁচিয়ে বলছে "আর যদি একটা গুলি চলে !"
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com