রিপোর্ট।।
ঝালকাঠির প্রাচীন জনপদ কীর্তিপাশা। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিক্রমপুর পোরাগাছার রাজা রাম সেন গুপ্ত এখানে আসেন। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিনি জলাশয় ও বনভূমির তালুক নিয়ে জমিদারি স্থাপন করেন।
জানা যায়, কীর্তিপাশার জমিদার পরিবারের সতিদাহ নিয়েই বলা হয় সতিদাহের দেশ বরিশাল। ব্রিটিশ শাসনের শেষ আমলে জমিদারপুত্র রাজকুমারকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। জমিদার বাড়ির অনেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে তার স্ত্রী হরসুন্দরীর নাম ওঠে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে এবং স্বামী হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেতে হরসুন্দরী স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যাওয়ার পণ করেন। তখন ব্রিটিশ সরকার আইন করেই সহমরণ বা সতিদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে।
খবর পেয়ে বরিশাল থেকে ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসেন জমিদার বাড়ির শ্মশানে। কিন্তু চেষ্টা করেও ওই ম্যাজিস্ট্রেট হরসুন্দরীকে আটকাতে পারেননি। শাড়ি-গহনা আর মাথায় সিঁদুর পড়েই স্বামীর সঙ্গে জ্বলন্ত চিতায় জীবন্ত পুড়ে সহমরণে যান সতী নারী হরসুন্দরী। সহমরণের সে সমাধিটি আজও সেদিনের সাক্ষী হয়ে আছে।
আরও জানা যায়, দুই ছেলে কৃষ্ণ কুমার সেনগুপ্ত ও দেবীচরণ সেনগুপ্তের জন্য নির্মাণ করেন দুটি বাড়ি। একটি পূর্ব বাড়ি অপরটি পশ্চিম বাড়ি। পরে তা দশ আনা বড় হিস্যা ও ছয় আনা ছোট হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিতি পায়।
কালেরবিবর্তে ছোট হিস্যা আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বড় হিস্যার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও সেখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। কমলীকান্দার নবীণ চন্দ্র নামে স্কুলটি নির্মাণের পর থেকে ঐতিহ্য সংরক্ষণে চেষ্টা চলছে। এখনও ভগ্নদশায় কোনোভাবে টিকিয়ে থাকা বড় হিস্যার নাট মন্দির, হলঘর, ছোট মন্দির, শানবাধান পুকুর হারানো দিনের সেসব ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
শহরের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক দিবজেন্দ্রলাল রায় জানান, কীর্তিপাশা জমিদার পরিবারের অনেকেই বিভিন্ন সময় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কীর্তিপাশাকে তুলে ধরেছেন কোলকাতা পর্যন্ত। বরিশাল বিভাগের প্রথম নাট্যমঞ্চ কীর্তিপাশায় চালু হয়। জমিদার পরিবারের নবকৃষ্ণ গাবখান নদী থেকে খাল খনন করে কীর্তিপাশা পর্যন্ত আনেন। নির্মাণ করেন রাস্তাঘাট। বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ শশী কুমার কীর্তিপাশায় দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে সেখানে নার্সিং ইনস্টিটিউট চালু হয়েছে।
ইতিহাসের এমন নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে ঘাট বাঁধানো পুকুর, উঁচু উঁচু প্যাঁচিল ঘোরা নান্দনিক কারুকাজের দালান, নাচঘারসহ নানা স্থাপনা। আর তা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বেড়াতে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। কিন্তু জমিদার বাড়ির হতশ্রী অবস্থা দেখে সবাই হতাশা প্রকাশ করেন।
এ নিয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ইতিহাস আর ঐতিহ্যগত কারণে কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি ঝালকাঠির অন্যতম পর্যটন স্পট। এটি সংস্কার আর সংরক্ষণে চেষ্টা চলছে। তবে জমি নিয়ে মামলা থাকায় জটিলতা রয়েছে বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ: ঝালকাঠি জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস কিংবা কলেজমোড়, বাসস্ট্যান্ড বা যে কোনো স্থান থেকেই কীর্তিপাশায় কম খরচে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় যাওয়া যায়। শহর থেকে ৫/৭ কিলোমিটারের সড়ক পথ বিলাসবহুল যান নিয়ে যাওয়া আসা করা যায়।
কীর্তিপাশা বাজার থেকে জমিদার বাড়ি ঢোকার পথে বাম দিকে সবচেয়ে বড় মঠটির সামনে বাড়ির মধ্যে বর্তমান কর্মকার বাড়িতে সমাধিটি আজও আছে।
সেখান থেকে সোজা দু’কদ পা ফেলেই জমিদার বাড়ির বাঁধানো পুকুর পাড়ে জমিদার বাড়ির প্রধান ফটক চোখে পড়বে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com