বরিশাল নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী কীর্তনখোলা নদী ঘিরে মচ্ছব শুরু হয়েছে অবৈধ দখলদারদের। জানা গেছে, ১৯৬০ সালে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য কীর্তনখোলা নদীতীরের ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। তবে ৫৬ বছরেও সীমানা নির্ধারণ না করায় অধিকাংশ সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ‘রসুলপুর বস্তি’র নামে দখলে নেমেছে দখলদাররা। বিআইডব্লিউটিএ যদিও ২০১৫ সাল থেকে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করছে এবং এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া তালিকাও তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু তালিকা আলোর মুখ দেখছে না কেন, এটাই হলো প্রশ্ন। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। এক সময় জালের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদ-নদী ও খাল-বিল আমাদের জীবন-জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করলেও আজ সেগুলো জীর্ণ-শীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। অনেক নদী ও খাল-বিল ইতোমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়েও গেছে। এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়াও একশ্রেণির দুর্বৃত্ত দেশের নদ-নদীগুলো দখল করে বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক প্লট, ইটভাটা ইত্যাদি গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ধরনের দূষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ কাজে দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাসীন দলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করছে এবং তারা প্রচলিত আইন ও নিয়ম-কানুনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না।
দেশের নদ-নদীগুলোকে দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। আশার কথা, নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যে সারা দেশের ৪৯ হাজার ১৬২ জন নদী ও খাল দখলদারের তালিকা ওয়েবাসাইটে প্রকাশ করেছে, যাদের ১ বছরের মধ্যে উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়েছে। নদী রক্ষা কমিশন যদি এ কাজে সফল হয়, তাহলে অনেক বড় একটি কাজ সম্পন্ন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখলের ঘটনা ঘটে। সরকার অবশ্য এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উচ্ছেদের পর ফের দখল ঠেকাতে নদীতীরে বনায়নসহ অন্যান্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হলে ভবিষ্যতে নদী দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com