মো. আহমেদুল আজম
বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরের মূলমন্ত্র- 'রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ'। কিন্তু তারা কারাবন্দিদের কিছুটা নিরাপদে রাখতে পারলেও আলোর পথ কি দেখাতে পারছে? বাংলাদেশের প্রায় সব কারাগারে বন্দিদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার আজও নিশ্চিত করা যায়নি। বৈশ্বিক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ পাওয়া একটি মৌলিক মানবাধিকার। পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদেও শিক্ষার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কারাগারে যখন কেউ বন্দি হিসেবে থাকেন, তখন তাঁর কি এই মৌলিক অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে? বিশ্বের বহু দেশের কারাগারে বিশেষভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে কারাবন্দিদের মানবসম্পদে পরিণত করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কারা অধিদপ্তর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা চালুর বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়নি। কারাগারের দুষ্টচক্রের ঘূর্ণাবর্তে কেউ যখন পড়ে যান, বিশেষ করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ আর থাকে না। জেল থেকে ছাড়া পেলেও পরে আবার তাঁকে অপরাধ করতে দেখা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধী পরবর্তী জীবনে আরও ভয়ংকর অপরাধে জড়িত হতে থাকেন। কিন্তু সেই বন্দি ব্যক্তিটি যদি কারাগারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতেন তাহলে হয়তো তাঁর জীবনের গল্পটা অন্য রকম হতে পারত।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কারাগার সংশোধনাগার হিসেবে বিবেচিত, যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এমনকি জেলজীবন শেষে সরাসরি চাকরিপ্রাপ্তির ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে কেন বন্দিদের এমন সুযোগ করে দেওয়া যাচ্ছে না? এর পেছনে কারণ খুঁজতে গেলে হাজারো সীমাবদ্ধতা বেরিয়ে আসবে। অনেকে জেল কোডের বিধানের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, কারাগারে অনেক অধিকার থেকে বন্দিদের দূরে রাখা হয়। কিন্তু কারাগারে শিক্ষার সুযোগই যদি না থাকে তাহলে আমরা বন্দিদের কীভাবে আলোর পথ দেখাব? তাঁদের শাস্তি শেষে যদি সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা না দেওয়া যায় তাহলে কারাগার থেকে বের হয়ে তাঁরা তো আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়বেনই। সাম্প্রতিক সময়ে কারা অধিদপ্তর গৃহীত এই বিষয়ে কিছু তৎপরতার কথা জানা গেছে। তবে কারাবন্দিদের জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে তারা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও এ পদক্ষেপ এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, তাঁদের জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি, এইচএসসি, বিএ, বিএসএস, এমএসএস, এমবিএসহ যেসব কোর্স চালু আছে, তা কারাগারেও চালু করা যায়। জানা গেছে, কিছুদিন আগে কারা মহাপরিদর্শকের তৎপরতায় এমন একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী কারাবন্দিদের নিজ খরচে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারাবন্দিরাও দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারেন; এ লক্ষ্যে তাঁদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া জরুরি। জেল যদি সংশোধনাগারই হয়, তবে জেলে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আর যখন কোনো একজন আসামি জেলে শিক্ষার সুযোগ পেয়ে ডিগ্রি নিয়ে বের হয়ে আসবেন, তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ থাকবেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশু কার্যকর পদক্ষেপ যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মো. আহমেদুল আজম :প্রভাষক, ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন, প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও গবেষক, হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com