ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে বন্ধের নামে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি গভীর রাতে ওই পরিবারের সদস্যদের মারধর, গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনজনকে ইউএনও’র অফিসকক্ষে একদিন আটকে রাখা হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে দোষ স্বীকারোক্তির কাগজে সাক্ষর নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। ইউএনও ওই ৭০ হাজার টাকা এখন জরিমানা দেখানোর পায়তারা করছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি গত ৭ মে দুপুরে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের কাছে এ ঘটনার বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্য রাতে উপজেলার মরিচবুনিয়া গ্রামের আলতাব হোসেনের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। খবর পেয়ে আলতাফ হাওলাদারের ঘরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান আট-দশ জন কর্মচারী নিয়ে রাত দুইটার সময় ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। এখানে বাল্য বিয়ে হচ্ছে অভিযোগ করে ইউএনও’র কর্মচারীরা লাঠি দিয়ে এলোপাথারী পিটুনি শুরু করেন। এতে ওই পরিবারের নারী-পুরুষ ও অতিথিসহ পাঁচ-ছয়জন আহত হয়। এর মধ্যে হুমায়ুন হাওলাদার মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। পরিবারটি ইউএন’র কাছে হামলার কারণ জানতে চাইলে আলতাব হোসেনের ছেলে হুমায়ুন হাওলাদার, সৌদি প্রবাসী ছেলে মামুন হাওলাদার ও অতিথি দুলাল হাওলাদারকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর অফিসে নিয়ে যান। আটককৃত প্রবাসী মামুন হাওলাদার কর্মস্থল সৌদি আরবে যাবার ২৭ এপ্রিল রাতে বিমানে টিকিট কাটা থাকায় পরিবারটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আটকৃতদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য আলতাফ হাওলাদারের পুত্রবধু তানিয়া আক্তার ইউএনও মিজানুর রহমান ও তাঁর সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাঈমুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন তাঁরা দেড় লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরিবারটির কাছে এত টাকা না থাকায় পরের দিন ২৬ এপ্রিল বিকালে ধার-দেনা করে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাঈমুর রহমানের অফিস কক্ষে যায়। নাঈম মুঠোফোনে নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে টাকা রেখে আটকৃতদের ছেড়ে দেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউএনও’র লোকজন পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন এবং আলতাফের ছোট ছেলে মাহমুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ছবি তুলে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া প্রবাসী মামুনসহ আটকৃতদের ইউএনও অফিসে দেখা করে কাগজে সাক্ষর দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আতঙ্কে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সেলিনা বেগম বলেন, আমি ইউএনও সাহেবের কাছে কাকুতি মিনতি করে বলেছিলাম, ‘আমাদের এখানে কোনো বিবাহের প্রস্তাব চলেনি। আপনি প্রমান পাইলে ব্যবস্থা নেন। ইউএনও কোনো কথা শোনেননি। আমাদের ওপর তাঁর লোকজন হামলা চালায়। পরে আমার দুই ছেলেসহ একজন আত্মীয়কে আটক করে নিয়ে যায়। পরে আমার মেঝ ছেলে ইউএনও’র অফিসে গেলে তিনি বলেন, তোমার ভাইকে ছাড়বো যদি দেড় লাখ টাকা দেও, আর যদি টাকা না দেও তাইলে চালান দেবো। আমার ছেলে মামুনের ২৭ এপ্রিল সৌদি যাবার ফøাইট ঠিক হয়ে আছে, তাই কোনো উপায় না পেয়ে ধার দেনা করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়াইছি’।
হুমায়েনের বাবা আলতাব হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেদের অনেক মারধর করছে। এখানে কাজী পায়নি, বরও পায়নি। তারপরও ইউএনও হামলা চালায়। এরপর আমার ছেলেরে ধরে নিয়ে যায়। আমার ঘরের দিকে তাকাইয়া ইউএনও অফিসের নাঈম বলে বিদেশিডারে ধর ওরে ধরলে বিদেশি কামাই বন্ধ হবেআনে। আমি এর বিচার চাই’।
প্রতিবেশী নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ‘এই বাড়িতে কোনো বিয়ের আয়োজন ছিল না। এই পরিবারটিকে হয়রানী করায় আমরা গ্রামবাসীরা অসন্তুষ্ট। আমরা এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি’।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, ‘বিবাহ হইলে-তো আমাকে জানইতো। এটা সম্পূর্ণ মিথ্য বানোয়াট অভিযোগ।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সারাদেশে বাল্য বিবাহ বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মরিচবুনিয়া গ্রামের ঘটনাটিও এই কার্যক্রমের অংশ। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হলেও পরদিন তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়া ও ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেবার বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার সহযোগী নাঈমের বিরুদ্ধে পরিবারটির কাছে অর্থ লেনদেনের কোন প্রমান থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনার সতত্যা পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com