আকতার ফারুক শাহিন
খোকন সেরনিয়াবাতকে হারাতে পরিকল্পিতভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিমকে বরিশালে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে বলে অভিযোগ খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীদের। তাদের দাবি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এ কাজ করা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা।
আর সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, খোকন সেরনিয়াবাতের চারপাশে থাকা সুবিধাবাদীরা আওয়ামী লীগের ঐক্যে ভাঙন ধরানোর জন্য এ ধরনের কথা বলছেন।
রোববার বরিশালে ১৬ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেন নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। ওই কমিটিতে সাদিক অনুসারী আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। এমনকি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও রাখা হয়নি। বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাদিক বিরোধীরাই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। তাদের অধিকাংশরাই আবার বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী।
যদিও হিরনপত্নী সাবেক এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ রয়েছেন সাদিকের দিকেই। তার হয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম জমা দিতে গিয়েছিলেন জেবুন্নেসা। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রায় ৯ বছর ধরে কোণঠাসা হিরনপন্থিদের একটি বড় অংশই এখন খোকন সেরনিয়াবাতকে ঘিরে আছেন। তাদের মধ্যে একটি অংশ আবার হিরনেরও আগ থেকে বরিশালে সাদিক পরিবার বিরোধী হিসাবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে বড় বড় পদে থাকা সাদিক পরিবার বিরোধী নেতারাও আছেন এই কোরামে। তাদের সঙ্গে আছেন ওয়ান-ইলেভেন কাল থেকে বরিশালে সক্রিয় এবং পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামিম এমপি।
সাদিক পরিবার বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হলেও তারা পর্দার আড়ালে ছিলেন। প্রকাশ্যে কখনো মুখও খোলেননি। তবে এবার মেয়র সাদিকের মনোনয়ন না পাওয়া আর খোকন সেরনিয়াবাতের মনোনয়ন পাওয়ার পর ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই নেমেছেন মাঠে। মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত বিষোদগারের পাশাপাশি চলছে খোকন সেরনিয়াবাতকে জয়ী করার চেষ্টা।
যদিও এই চেষ্টায় শুরু থেকেই ফাটল হয়ে আছে মেয়র সাদিক বনাম খোকন সেরনিয়াবাতের বিভক্তি। রোববার খোকনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর তা আরও স্পষ্ট হয়। এই কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় এখন পরিষ্কার যে, মেয়র সাদিক এবং তার অনুসারীদের বাদ দিয়েই নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চাইছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী। যদিও এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা বলা মুশকিল; কেননা মেয়র সাদিক যেমন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তেমনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই সাদিক পরিবারের অনুসারী। নগরের ৩০ ওয়ার্ডে থাকা আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোও সাদিক অনুসারীদের দখলে।
নেতৃত্ব আর আধিপত্য থেকে ভাতিজা মেয়র সাদিককে মাইনাস করতে চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের যখন এভাবে একের পর এক পদক্ষেপ ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন উঠল হাতপাখা প্রতীকে ভোটযুদ্ধে নামা মুফতি ফয়জুল করিমের সঙ্গে সাদিক পরিবারের সখ্য আর গোপন সমঝোতার অভিযোগ।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে সাদিক অনুসারীদের বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থীর করা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘বুঝে শুনেই সাদিক ও অনুসারীদের বাদ দিয়ে কমিটি করেছেন খোকন সেরনিয়াবাত। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর মুখে নৌকার পক্ষে কাজ করার কথা বললেও আজ পর্যন্ত বরিশালে আসেননি মেয়র সাদিক। তার অনুসারী কেউও এখন পর্যন্ত মাঠে নামেনি নৌকার পক্ষে।
তাছাড়া আমাদের কাছে খবর আছে যে, হাতপাখার প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাদিক পরিবারের সদস্যরা। তা নাহলে হঠাৎ করে ইসলামি আন্দোলনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করিমের এখানে মেয়র প্রার্থী হওয়ার কোন কারণ নেই। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে মেয়ার সাদিক অনুসারীদের নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।
এসবই করা হচ্ছে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে হারানোর জন্য। শওকত হোসেন হিরনের নির্বাচনের সময়ও একইভাবে ষড়যন্ত্র করে তাকে হারানো হয়েছে। এ কারনেই নৌকার জন্য যারা অন্তঃপ্রাণ তাদের নিয়েই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছেন খোকন সেরনিয়াবাত।’
খোকন অনুসারী আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও নগরের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘মুফতি ফয়জুল করীমের মতো নেতার এখানে প্রার্থী হওয়ার কথা না এবং তিনি এই নগরের ভোটারও না। আমার সন্দেহ কোনো একটি গোষ্ঠী তাকে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইন্ধন জুগিয়েছে।’ মেয়র সাদিক পরিবারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে পুরো বরিশাল এখন ঐক্যবদ্ধ এবং নৌকা জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশ আমি মাথা পেতে নিয়েছি। নৌকার পক্ষে কাজ করব বলে ঘোষণাও দিয়েছি। তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য। সেরনিয়াবাত পরিবারের কারও রক্তে বেইমানি বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তথা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে এই পরিবারের কেউ কখনো কোনদিন যায়নি। ভবিষ্যতেও যাবে না।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখে আজ যখন সবার ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা তখন কারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে? কারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে ? তারা কি জানে না যে দলে বিভক্তি এলে নৌকা বিপদে পড়বে? নাকি তারা চায় না যে আমার চাচা খোকন সেরনিয়াবাত জয়লাভ করুক? একটি কথা সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে একটি চক্র কিন্তু ১৫ আগস্টের কালরাত থেকে সেরনিয়াবাত পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে মাঠে আছে।
খোকন সেরনিয়াবাতের পরাজয়ের মাধ্যমে সেই মিশন সফল করার কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে। এসব যারা বলছে, আমি নিশ্চিত যে তারা সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তারা চায় না যে খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচনে জিতুক। আমি খুব শিগগিরই বরিশালে যাব এবং নৌকার পক্ষে মাঠে নামব। তখনই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
খোকন অনুসারীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, ‘বিগত সব সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাহলে সেসব প্রার্থীও কি কারও ইন্ধনে দেওয়া হয়েছে? ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে আমাদের দল, সেখানেও কি কারও ইন্ধন রয়েছে? বরিশালে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহু আগে থেকে।
আমি নিজে নগরের ২৪নং ওয়ার্ডের ভোটার। আসলে নির্বাচনি মাঠে আমাদের শক্ত অবস্থানে ভীত হয়ে এসব অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। তবে কোনো কিছুতেই কিছু হবে না। আমরা বরিশালের আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জয় ছিনিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com