ড. মো. শাহিনুর রহমান
অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ ও সাবেক উপ-উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আগস্ট বাঙালির জন্য বেদনাবিধুর শোকের মাস। প্রতিবছর এ মাস আমাদের স্মরণপথে নিয়ে আসে ১৯৭৫-এর আগস্টের সেই বিভীষিকাময় অমা-রজনির কথা, যখন দেশবৈরী সাম্প্রদায়িক কুচক্রীচক্রের সমর্থনপুষ্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র পরিবারের ওপর পাশবিক আক্রোশ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিদেশে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান শুধু তাঁর দুই কন্যা, যাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠজন বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের অবিসংবাদিত নেত্রী ও সর্বজনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। এই আগস্ট মাসেই প্রাণঘাতী আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছিলেন তিনিও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যখন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপরও সেই একই রকম প্রতিহিংসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে '৭৫-এর হন্তারকদের উত্তরসূরি দানবরা।
এই মাসে আমরা হারিয়েছি জাতীয় সংস্কৃতি নির্মাণে পথিকৃৎ দু'জন মহাপুরুষকে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামকে। পরবর্তীকালে আগস্ট মাসে আমরা আরও হারিয়েছি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল কবি শামসুর রাহমান এবং অমিত প্রতিভাবান ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক ও প্রথাবিরোধী কবি হুমায়ূন আজাদকেও। আর ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিরীহ মানুষ যারা মিলিত হয়েছিলেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এক সমাবেশে। আগস্টে ঘটা এসব মৃত্যু কোনোক্রমেই সাধারণ মৃত্যুর ঘটনা নয়, কেননা জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতির সেবকদের তিরোধান আমাদের জীবনে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে যা পূরণ করা অসম্ভব। সে কারণেই আগস্ট কেবল শোকের মাস নয়, স্মরণ করার মাসও।
১৯৭১-এ এক সমুদ্র রক্তে অবগাহন করে যে বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, তাঁর হৃদয়ে বাঙালি জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটেছিল যাঁর স্বপ্নদর্শী দিকনির্দেশনায়, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অন্তর-লালিত স্বপ্ন, তাঁর মহাকাব্যিক জীবনের কর্ম, তাঁর প্রতিশ্রুতিরাশি একাকার হয়ে বাঙালিত্বের চেতনা বিনির্মাণ করেছে। বাঙালির সহস্রবর্ষের ইতিহাসে মননে বিশ্বাসে ও কর্মে পরিপূর্ণ বাঙালি তিনি। সাংবাদিক সিরিল ডান যেমনটি বলেছেন, 'বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে বংশ, জাতিসত্তা, ভাষা, কৃষ্টি ও জন্মসূত্রে পরিপূর্ণ বাঙালি একমাত্র নেতা শেখ মুজিব। তাঁর দৈহিক আকৃতি ছিল বিশাল। তাঁর কণ্ঠস্বরে বাজত বজ্র নির্ঘোষ। গণমানুষের ওপর তাঁর ক্যারিশমা জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছে। তাঁর সাহস এবং আকর্ষণ তাঁকে সমকালের একজন অনন্য অতিমানবে পরিণত করেছে।' মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসের যেমন সমগ্র আরববাসীর কাছে তাঁর আরবীয় জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সীমা পেরিয়ে সারাবিশ্বের সব বাঙালির কাছে মুক্তিপ্রদায়ক হিসেবে বরণীয় হয়েছেন। তাঁর বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাঙালির জন্য এক নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির উদ্বোধন করেছে। গাঙ্গেয় বদ্বীপের অধিবাসীরা তাঁদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে যুগ যুগ ধরে যে পৃথক অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছে, তার পথে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হানাদার বিজাতীয় শক্তি। বাঙালি বারবার পরাধীনতার শৃঙ্খল পরেছে তার পায়ে। বারবার মৃত্যু ঘটেছে তার আপন অধিকারবোধের। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন সেই হূত অধিকারবোধ। তাঁর গগনবিস্তারী হৃদয়ে প্রোথিত ছিল মুক্তপ্রাণ বাঙালির অবিনাশী চেতনা। তিনি সেই চেতনা প্রসারিত করেছিলেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। স্বীয় অধিকারবোধের সেই চেতনা বাঙালিকে দিয়েছে মুক্তির দিশা, পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে স্বাধীনতার সুবাসিত বন্দরে, যেখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক বঙ্গসন্তান গর্বোদ্ধত মাথা আকাশে তুলে তাঁর আপন ভাষায় চিৎকার করে নিজের অস্তিত্ব জাহির করতে পারে।
৬৬-তে যে ছয়দফা দাবির উত্থাপন তিনি করেছেন ৬৮, ৬৯-এ গণঅভ্যুত্থান অতিক্রম করে, ৭০-এর নির্বাচনে সমগ্র বাঙালির যে দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল, সেই দাবির মধ্যেই স্বাধীনতার মূল প্রবাহটি ফল্কগ্দুধারার মতো বিদ্যমান। একটি দেশে যখন স্বতন্ত্র কারেন্সির কথা বলা হয়, স্বতন্ত্র সামরিক বাহিনীর কথা বলা হয় তখন সব শর্তের মধ্যে স্বাধীনতার শর্তটিই কেবল প্রকট আকার ধারণ করে। পাকিস্তানি জান্তাও জানত যে স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতি ৬-দফা দাবিগুলোর স্বীকৃতি পেলে আরও বড় অর্জনের দিকে ধাবিত হবে এবং তার ফলে পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
ছয় দফার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান মুখপাত্র রূপে আবির্ভূত হন। কারণ তিনি এই স্বপ্নকে সার্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি বাঙালি জাতির অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এতটাই সুদৃঢ় করে দেয় যে, আইয়ুবশাহী ও তাঁর দোসররা যারপরনাই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে এবং তাঁকে কারারুদ্ধ করে রাখার নীতি অবলম্বন করে। জাতিকে শোষণ নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে মূল্যহীন জ্ঞান করেন। এর প্রতিদানে পূর্ববাংলার জনগণ তাঁকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে অভিষিক্ত করেন (২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯)। 'বঙ্গবন্ধুর মধ্যে তারা এক অবিসংবাদী নেতৃত্বকে খুঁজে পান যিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলের মধ্যে প্রায় ১২ বছর সময়কাল কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন। ১২ বছরের কারাজীবন ও ১০ বছর ধরে নিরাপত্তা রক্ষীদের শ্যেনদৃষ্টির মধ্যে মুজিবের জন্য পাকিস্তান মুক্ত রাষ্ট্র নয়, বরং ছিল একটি বিশাল বন্দিশালা।' সুতরাং বঙ্গবন্ধুর নিজের জীবন পাকিস্তানি শাসনামলে প্রতিটি বাঙালির অনুভূতির প্রতীকী প্রকাশ হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক নেতৃত্বে বাংলার জাগরণ তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। তাই তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ৬-দফার উদ্দেশ্যকে বানচাল করে দেওয়া। এজন্য তারা অত্যন্ত কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে এবং একে প্রত্যাখ্যান করে। এই পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কাজকে অনেকটা সহজ করে দেয়। স্বজাতির স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে সুদৃঢ় পণ, অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অবধারিতভাবে বঙ্গবন্ধুকে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে একমাত্র ভরসার স্থল করে তোলে। তিনি বাঙালির অগ্রনায়কে পরিণত হন; একই সঙ্গে পরিণত হন ধিকৃত সাম্রাজ্যবাদীদের আতঙ্কে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে তিনি বলেন যে, বাঙালির ইতিহাস এবং উচ্চাভিলাষকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। শুধু বঙ্গোপসাগরের নাম ছাড়া আর কোথাও বাংলা অভিধা ব্যবহার করা হয় না। তিনি এরপর ঘোষণা করেন যে, এরপর থেকে পাকিস্তানে পূর্বাঞ্চলীয় এই প্রদেশটি 'পূর্ব পাকিস্তান'-এর বদলে বাংলাদেশ নামে পরিচিত হবে। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় বাংলাদেশ নাম আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা পায়। একে বলা যায় স্বতন্ত্রতার দিকে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন লালিত ছিল বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। '৭২-এর ২৬ মার্চে বেতার ও টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন : 'শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে।' ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু আরও বলেন : 'ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ। বাংলা আমার ভাষা। ... আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। ...আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরোপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।' ধ্বংসস্তূপের ওপর সমৃদ্ধির ইমারত গড়তে যে সময় প্রয়োজন, সংগ্রামোত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধুকে সেই সময় দেওয়া হয়নি। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! যে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু জীবনপণ করেছিলেন, সেই স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর তাঁকে কৃতঘ্ন ঘাতকের নির্মম বুলেটের শিকার হতে হয়েছে। ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলেও তাঁর বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বকে হত্যা করতে পারেনি, তাঁর উত্তরাধিকারকে হত্যা করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সত্যিকার মুক্তি। ক্ষুধা থেকে, দারিদ্র্য থেকে, অবিচার থেকে, নির্যাতন থেকে মুক্তি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে রয়ে গেছে তাঁর নেতৃত্বের উত্তরাধিকার। বাবার আদর্শকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা আত্মনিয়োগ করেছেন। কিন্ত এই পথে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। স্বৈরাচারের শ্যেনদৃষ্টির নাগপাশে অন্তরীণ থাকতে হয়েছে বহুদিন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্র্রদায়িক ও মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। পাকিস্তান আমল তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা বাংলা ভাষায় কথা বলা সত্ত্বেও বিজাতীয় উর্দুকে বাংলার ওপরে স্থান দিতে চেয়েছিল; যারা মুক্তিকামী বাঙালিকে হিন্দু ও কাফের বলে গালি দিয়েছে; যারা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার স্বপ্ন এখনও দেখে, সেই সব জামায়াতি চক্র এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে চলাফেরা করে। শুধু তাই নয়, তারা ১৯৭১-এ তাদের ভূমিকার জন্য কখনও অনুশোচনাগ্রস্ত হয়নি, বরং কৃতকর্মের জন্য তারা গর্বিত এবং উচ্চস্বরে তারা এর সাফাই গেয়ে এসেছে। এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার এ দেশের মাটিতে না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেননা বঙ্গবন্ধুর লালিত চেতনার সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্র্রদায়িকতার প্রচণ্ড বিরোধ রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাই একটি অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজে হাত দিয়েছেন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। কাজটি দুরূহ হলেও সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর আপসহীনমনোভাব ও নিজ জাতির প্রতি সুগভীর মমত্বকে আপন হৃদয়ে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু-দুহিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে অনন্য সফলতা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁকেও বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শের বাস্তবায়নের পথে জীবনসংশয়ী হামলার শিকার হতে হয়েছে। ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে যেখানে থাকুন না কেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং তাঁর নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থিদের প্রতিহিংসার লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু পিতার মতোই প্রাণভয়ে স্বীয় কর্তব্যের বিপদসংকুুল দুর্লঙ্ঘ কক্ষপথ থেকে তাঁকে বিচ্যুত করা সম্ভব হয়নি। তাঁর নেতৃত্বে বাঙলার মাটিতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, তাঁর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর মানসলালিত ৭২-এর সংবিধান পুনরায় কার্যকর হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীরা চিহ্নিত হয়েছে এবং তাদের বিচার চলমান, তাঁর নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার পথে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। প্রকৃতপক্ষে, আগস্ট মাস তাঁকে এবং আপামর বাঙালিকে যেমন দুর্মর শোক হেনেছে, তেমনি দুর্মর শক্তিও জুগিয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে চেতনা বঙ্গবন্ধু তাঁর সময়ের আপামর বাঙালির হৃদয়ে সঞ্চারিত করেছেন তা প্রজন্মান্তরে বহন করে নিয়ে যাওয়ার। আর তাই আমরা আশাবাদী, বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ও চর্যার নিরিখে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন ঘটিয়ে গেছেন, তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও বিকাশ তাঁর আত্মজার নেতৃত্বে অব্যাহতগতিতে চলমান থাকবে। পঁচাত্তরের বিভীষিকাময় কালরাতে পিতা-মাতা, ভাই সবাইকে হারিয়ে বাংলার গণমানুষের কাছে এসে, তাদের মাঝেই নিজ পরিবারকে ফিরে পেতে এবং তাদের নিয়েই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সালে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সফল হয়েছে কেননা তাঁর হাত ধরে উন্নয়নের মহাসড়কে স্পর্ধিত পদবিক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে রূপকল্প ২১, ৪১ এবং ডেলটা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের পথে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নির্ভীক দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদিন গিয়ে দাঁড়াবে বিশ্বের সর্বোন্নত দেশগুলোর পাশে- এই প্রত্যাশা আমাদের।
ড. মো. শাহিনুর রহমান: অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ; সাবেক উপ-উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com