আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত বরগুনার আমতলী উপজেলা। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে দুই গ্রুপ মারমুখী অবস্থান নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি উভয় গ্রুপ একের পর এক মামলা-হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
আমতলী পৌর শহরের আল হেলাল মোড়ের সাকিব প্লাজার সামনের গত ১৬ আগস্ট রাত ৮টার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ মালাকার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শিহাব রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে পেছন থেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে চলে যায়।
দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন খান এলাকায় ফিরে অভিযোগ করেন, আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান ও তার ভাই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় তাদের নির্দেশে ছাত্রলীগের দুই নেতা তার উপর হামলা চালিয়েছে।
এর আগে মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রধান হামলাকারী সবুজ মালাকার, মেয়র মতিয়ার ও তার ভাই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবরসহ ৮জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন মোয়াজ্জেমের ভাতিজা। আদালত মামলাটি আমতলী থানাকে এজাহারের আদেশ দেন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জিএম হাসান গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে মেয়র মতিয়ার রহমানের গ্রুপও মামলার প্রতিবাদ ও আসামিদের মুক্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল শুরু করে। উভয় গ্রুপ মিছিল নিয়ে থানার সামনের দুই প্রান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পুলিশি তৎপরতায় সংঘর্ষ এড়ানো গেলেও শহরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতিকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগে সংগঠন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী সামসুল হক, দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার ফকিরসহ মোয়াজ্জেম ও হাসান গ্রুপ সমর্থকদের দাবি, মতিয়ার রহমান ও তার ভাই মজিবর রহমান দলে অনুপ্রবেশকারী। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে দলকে ধ্বংসের পাঁয়তারায় লিপ্ত।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মেয়র মতিয়ার রহমান। উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, মোয়াজ্জেম হোসেন খান, জিএম হাসান ও তার ভাই জিএম মুসাসহ তাদের গ্রুপের লোকেরা গত বছরের ২১ মে তার ভাগ্নে আবুল কালাম আজাদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আজাদ এখনো পঙ্গুপ্রায় অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও তার ভাই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের দাবি, জনপ্রিয়তায় ভীত ও দলকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আমতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মারমুখী কর্মকাণ্ডে ভীত আমতলীর সাধারণ মানুষ। উভয় গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মারমুখী আচরণে বিব্রত পুলিশ। মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com